বিভিন্ন সময় ‘গুম’ ও ‘নিখোঁজ’ হওয়া ব্যক্তিদের ঈদুল ফিতরের আগে ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তাদের অর্ধশতাধিক স্বজন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাদের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে রাজনীতিক ও মানবাধিকর্মীরা চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মানবন্ধনে ঢাকার বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, গত পাঁচ বছরের ভাইয়ের সন্ধানে এমন কোথাও নেই যে যেখানে যাননি তারা। তবে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এতদিনেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একবারের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা খোঁজ নিতে গেলে তারা বলে, ‘দেখছি’। কিন্তু সেই সময়টা আর শেষ হয় না। সুমনের অপেক্ষায় সারারাত জেগে জেগে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান মারুফা। কী করব, কোথায়, কার কাছে যাব, সেটা ভেবে পাই না, বলে কেঁদে ফেলেন তিনি। ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সুমনসহ আটজন নিখোঁজ হন। এরপর তাদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। রামপুরা থানা ছাত্রলীগ নেতা এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম বলেন, তপু ছিল হাসিখুশি, কর্মীবান্ধব আর রামপুরার একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। একাধিকবার সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য তাকে পুরষ্কারও দেওয়া হয়েছিল। প্রায় দুই বছর ধরে ছেলের খোঁজ না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি একজন মা হিসেবে সরকারের কাছে আবেদন করছি আমার সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন। তপু যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাকে, সাজা দিন। কিন্তু তাকে জীবিত ফেরত দিন। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৩৫৩ নম্বর বাড়ি থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন তপুকে তুলে নিয়ে যায়। সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনের ভাই জাহিদ খান শাকিল বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হলে সুজন ও তার আরেক কর্মী কাজী ফরহাদ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের নয়াকান্দি গ্রামে পালিয়ে ছিলেন। ৭ ডিসেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশ এখন মৃত্যুদ্বীপে পরিণত হয়েছে, মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছেন (মানববন্ধনে), তারা স্বজনদের মৃত্যুর জন্য আহাজারি করছেন। সারা দেশে এখন প্রমাণ ছাড়া মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ নেই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মান্না বলেন, ১০ দিনে যে ৫৪ জনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হল, তাদের বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আছে, সেটা প্রকাশ করুন। এক মাঘে শীত যায় না। যারা নির্বিচারে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যা করছে, একদিন তাদেরও খুনি হিসেবে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, বলেন মান্না। মানববন্ধনে সংহতি জানানো মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সারাদেশে এখন একটি ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সারাদেশে গত ১০ দিনে ৫৪ জন কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছেন। তাদের মৃত্যুর ঘটনাসহ সারাদেশে এখন পর্যন্ত যারা গুম রয়েছেন, তাদের ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আস্থাশীল কমিশন গঠন করতে হবে।
Leave a Reply